10 Minutes 38 Seconds in This strange world
Author: Elif Shafak
Translator: Ahnaf Tahmid
গল্পটা একজন মৃত্যুপথযাত্রীর। ঠিক ১০ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড পর লেইলা নামের মেয়েটা পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে ছুটতে শুরু করবে উর্ধ্বপানে।
না, ভুল বললাম। লেইলা নয়, ওর নাম টাকিলা লেইলা।
জি, নিশ্চিত হয়েই বলছি। আমাদের গল্পটা টাকিলা লেইলার জীবনের গল্প।
ভ্যান নামক ছোট্ট এক শহরে জন্ম মেয়েটার। পারিবারিক অশান্তি আর যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে অতিষ্ট লেইলা বাড়ি ছেড়ে পালাল ইস্তানবুল। সুখ বলতে যে কী বোঝায়, জানতেই পারল না। ভাগ্যের ফেরে হয়ে গেল যৌনকর্মী।
জীবনের বাঁকে জুটে গেল পাঁচজন বন্ধু, ঘরও বাঁধা হলো ভালোবাসার মানুষের সাথে। একদিন সবকিছু চোখের নিমেষে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল। মৃত্যুর সময়টায় জীবনের এই দৃশ্যগুলোই ধরা পড়ল নানা স্বাদে, বর্ণে, গন্ধে।
জামিলা, জয়নাব, হুমেইরা, নালান আর সিনান। গভীর রাতে পিকআপ চুরি করে কিলিয়োসের নিঃসঙ্গ সমাধিক্ষেত্রে কী করতে এসেছে ওরা? বসফরাসের বুকে নীলরঙা মাছটার সাথে সাঁতার কাটল কে?
‘দ্য বাস্টার্ড অফ ইস্তানবুল’ এবং ‘দ্য আর্কিটেক্ট’স অ্যাপ্রেন্টিস’র পর এলিফ শাফাকের চোখে আরও একটুকরো ইস্তানবুলের দেখা পাওয়া গেল এই আখ্যানে। আগের চেয়েও শক্তিশালী, আগের চেয়েও অসাধারণ।
৳ 330 ৳ 248
379 in stock
Book Details
Translator | Ahnaf Tahmid |
---|---|
Author | Elif Shafak |
Cover Designer | Abul Fatah |
Language | Bangla |
ISBN | 978 984 94826 4 2 |
Page Number | 254 |
Release Date | February 2019 |
Ashikur Rahman –
কিছু বই আছে, যা শেষ করার পর কিছুক্ষণ হাতে নিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছে করে। কারণ দু’মলাটে বন্দী চরিত্রগুলো কিছু সময়ের জন্য খুব বেশি আপন হয়ে যায়, আর আপনজনদের মায়া ত্যাগ করতে ইচ্ছে করে না হুট করে। তেমনি কখন যে লেইলার জীবনের সাথে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম, টের পাইনি। শারীরিক-মানসিক নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করে, সমাজের বাঁকা দৃষ্টির শিকার হয়ে, সংস্কৃতি-ধর্মের বেড়াজালে আবদ্ধ থেকে বিষিয়ে উঠা লেইলাকে একটা সময় বড্ড পরিচিত কেউ বলে ভ্রম হয়, যার জীবনের গল্পটা ধীরে ধীরে জানতে পারছি পাতার পর পাতা উল্টে। উচ্ছল, প্রাণবন্ত লেইলা; দুনিয়াকে দেখার-জানার-শোনার অদম্য আগ্রহকে পুষে রাখা লেইলাকে জোর করে পরিয়ে দেয়া হয় গোঁড়ামির শেকল। শৈশবেই আপন চাচার হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে বড় হওয়া লেইলা পরিবারের উপর এক বুক অভিমান নিয়ে নতুন জীবনের আশায় পাড়ি জমায় ইস্তানবুলে। পেছনে ফেলে আসে কৈশোরের ভালোবাসা সিনানকে, ফেলে আসে চার দেয়ালের বদ্ধ পরিবেশ, ধর্মীয় শাসন নামের অবিচারের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে।
কপালে যে সুখ লেখা নেই তা লেইলা মনে হয় আন্দাজ করতে পারেনি।
অন্ধকার এক সময়ে ইস্তানবুলে এসে হাজির হয় মেয়েটা। নিজের অজান্তেই বিক্রি হয়ে যায় বেশ্যাপল্লীতে। খদ্দেরদের তৃষ্ণা মেটাবার উপায়গুলো অনিচ্ছাসত্ত্বেও রপ্ত করে নেয়, পরিণত হয় ‘মিষ্টি মা’ ওরফে ‘তেতো মা’ নামক মক্ষীরাণীর প্রিয়পাত্রীতে। লেইলা আফিয়া কামিল থেকে পরিণত হয় মোহনীয় টাকিলা লেইলাতে। পতিতাবৃত্তির অন্ধকার জগতেও এক টুকরো আলো হয়ে আসে এক বিদ্রোহী রাজপুত্র। সাম্রাজ্যবাদের জন্য লড়াই করে যাওয়া এক যুবক আলি। জুটে যায় নানা রঙের, ধরণের পাঁচ বন্ধু- জামিলা, জয়নাব, হুমেইরা, নালান আর সিনান। যারা প্রত্যেকেই সমাজের অপছন্দের পাত্র, জীবন নামক যাঁতাকলে পিষ্ট। লিঙ্গ, ধর্ম, রঙ আর জীবনের গল্প ওদের প্রত্যেককেই আলাদা করে তুলেছে যেভাবে, ঠিক সেভাবেই একত্রিতও করেছে।
ও আচ্ছা, মিস্টার চ্যাপলিনও আছেন গল্পে। তবে এই চ্যাপলিন আপনার-আমার পরিচিত গুঁফো চার্লি চ্যাপলিন নন।
এলিফ শাফাক গল্পে দক্ষ শিল্পীর মতো এঁকেছেন তৎকালীন ইস্তানবুলের রাজনৈতিক ইতিহাস, সমাজ ব্যবস্থা, মানুষের মন-মানসিকতার এক নিখুঁত চিত্র। বাক্যে উপমার ব্যবহার লক্ষ্যণীয়। গল্পে সময়ের ব্যাপ্তি ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। এর মাঝে লেখিকা তুলে ধরেছেন গুরুত্বপূর্ণ কিছু রাজনৈতিক ঘটনাকে- ১৯৬৮ সালে ইস্তানবুল থেকে আমেরিকান সৈন্য হটাবার জন্য আপামর জনতার প্রতিবাদ, ১৯৭৭ সালের পহেলা মে’তে তাকসিম স্কয়ারে বামপন্থীদের উপর গুলিবর্ষণ- প্রতিটি ঘটনাই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে লেইলার জীবনে।
ভাগ্যের ফেরে ছেড়ে দিয়েও ফিরে আসতে হয় পুরনো পেশায়, আর তারপরই সকরুণ ভাবে যবনিকা পাত ঘটে লেইলার নানান স্বাদ-বর্ণ-ঘ্রাণে পরিপূর্ণ বৈচিত্র্যময় জীবনের।
১০ মিনিটস ৩৮ সেকেন্ডস ইন দিস স্ট্রেঞ্জ ওয়ার্ল্ড- স্রেফ টাকিলা লেইলার গল্প নয়; এই গল্প নিখাদ বন্ধুত্বের, উত্তাল সময়ের, উন্নত জীবনের হাতছানি দেয়া ইস্তানবুলের অন্ধকার রূপকে দেখিয়ে দেবার এক আখ্যান।
অনুবাদ প্রসঙ্গেঃ
আহনাফ তাহমিদের অষ্টম অনুবাদ গ্রন্থ। অনুবাদ কৌশল ভালভাবেই রপ্ত করেছেন বলে প্রশংসা করা বাঞ্ছনীয়। শাফাকের লেখাকে বাংলা ভাষায় তুলে আনার দুরূহ কাজটা চমৎকার ভাবে সম্পন্ন করেছেন বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। দেশী বাগধারার ব্যবহার করেছেন প্রয়োজনমাফিক, শব্দ চয়নেও দেখিয়েছেন মুন্সিয়ানা। পড়তে গিয়ে আটকাতে হয়নি কোথাও।
ভুলভাল কী পেলামঃ
দুয়েকটা টাইপো আর উপেক্ষা যোগ্য গুটি কয়েক বানান ভুল চোখে পড়েছে। বইটিতে লেইলার জীবন সায়াহ্নের শেষ ১০ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডকে একেকটি অধ্যায়ে সাজিয়েছেন লেখিকা, সেখানে শেষ আট সেকেন্ডকে ভুলে আট মিনিট লেখা হয়েছে। এটা ছাড়া আর কোনো চোখে পড়ার মতো ভুল নেই।
বাঁধাই, কাগজ ও প্রচ্ছদঃ
বইটির বাঁধাই ও কাগজের মান এক কথায় চমৎকার, তবে মূল প্রচ্ছদ অপরিবর্তিত রাখাকে স্বাগত জানালেও ফ্রন্ট কাভারে সাদামাটা ফন্টের ব্যবহার ভাল লাগেনি। এদিক দিয়ে প্রচ্ছদশিল্পী আবুল ফাতাহ’র আরেকটু যত্ন নিয়ে কাজ করা উচিত ছিল। আর শেষের চার পৃষ্ঠায় গল্পের সাথে সম্পৃক্ত কিছু ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে, যা পাঠকের জিজ্ঞাসু মনের খোরাক মেটাতে পারবে। ব্যাপারটা বেশ আকর্ষণীয় লেগেছে আমার।